যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি কার্যক্রম চলমান বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বুধবারের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে। যুক্তরাজ্য থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। তারপরও সব জটিলতা আইনি প্রক্রিয়াতেই নিরসন করে এ অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তাকে প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করার বিষয়ে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ উদ্দেশ্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি কার্যক্রম একইসঙ্গে চলছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এ প্রক্রিয়ায় ফল আমরা অচিরেই দেখতে পারব। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বিদেশে পলাতক আসামি মওলানা তাজউদ্দীন, মো. হারিছ চৌধুরী (গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ- বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে) ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে। এ ছাড়া পলাতক আসামিরা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে আমি নিজেই বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে একাধিক চিঠি দিয়েছি। এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সাক্ষাতে তাদের ব্যক্তিগত সহযোগিতাও চেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে খুনিদের অবস্থানের বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকায় এ বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে মেজর (অব.) নূর চৌধুরী বর্তমানে সপরিবারে কানাডায়, আব্দুর রশিদ ও মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল ইসলাম ডালিম পাকিস্তান বা লিবিয়ায়, লে, কর্নেল (অব.) রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র এবং রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানের ভারতে অবস্থানের কথা জানা গেছে। এ ছাড়া জিম্বাবুয়েতে লে. কর্নেল (অব.) আজিজ পাশার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত ১২ জন আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।