বাংলাদেশকে তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও পাঠান তিনি। তার অভিযোগ ছিল, রাজ্যের সাথে কোনো আলোচনা না করেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশকে পানি বিক্রি করতে চাইছে। এমনকি হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, কেন্দ্র যদি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার প্রতিবাদে গোটা দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কিন্তু মমতার এই দাবিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, গঙ্গার পানি চুক্তি পুনর্নবীকরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি লিখেছিল কেন্দ্র। তাতে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা করার জন্য গঠিত কমিটিতে রাজ্যের তরফে মনোনীত প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছিল। ওই বছরেরই ২৫ আগস্ট রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কমিটির জন্য রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (নকশা ও গবেষণা)-কে মনোনীত করা হয়। চলতি বছরের ৫ এপ্রিল, রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব চিঠি দিয়ে ফারাক্কা ব্যারাজের ভাটির অংশ থেকে পরবর্তী ৩০ বছরের জন্য তাদের মোট পানির চাহিদার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সাথে পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে যে মনোমালিন্য শুরু হয়েছে, তাতে মমতা ব্যানার্জিকে দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্র পানি বিক্রি করতে চাইছে মমতার এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা দাবি’ বলে আখ্যায়িত করেছে কেন্দ্র।
সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার মিথ্যা দাবি ছড়িয়েছে যে, ফারাক্কায় গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনাতে তাদের সাথে পরামর্শ করা হয়নি।
গত শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ২০২৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। তার পুনর্নবীকরণের জন্য উভয় দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করবেন। একইসঙ্গে তিনি এটাও জানান, তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প সমীক্ষার ব্যাপারে ভারতের একটি কারিগরি দল খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।
বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা কিংবা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন মমতা ব্যানার্জি। তার বক্তব্য, ফারাক্কা চুক্তির কারণে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছি। বাংলার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী দিনে গঙ্গার ভাঙন বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি পানির তলায় তলিয়ে যাবে। ফারাক্কায় ড্রেজিং না করার ফলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা কমে গেছে, টান পড়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবিকায়। আবার তিস্তার পানি নিয়ে তার অভিমত, তিস্তায় পানি নেই। সেখান থেকে পানি দিলে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামী দিনে খাবার পানি পাবে না, বিশাল অংশের মানুষের কৃষি কাজে সমস্যা হবে। অর্থাৎ রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কোনোভাবেই পানি দেওয়া সম্ভব নয়।
মোদিকে লেখা তিন পাতার চিঠিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে মমতা লেখেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়।
মমতার অভিমত, এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি (১৯৯৬) পুনঃনবীকরণের প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে, কারণ এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এটি এমন একটি চুক্তি যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের নীতিগুলি বর্ণনা করে এবং আপনি জানেন, রাজ্যের মানুষের জীবন-জীবিকা বজায় রাখার জন্য ফারাক্কা থেকে পাওয়া পানির বিশাল প্রভাব রয়েছে এবং ফারাক্কা ফিডার ক্যানেল এর মাধ্যমে যে পানি আসে, তা কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর তার জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্যতা হারাবে।