ডা. মো. মোশফেকুর রহমান খান
পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি (Peripartum Cardiomyopathy) হলো একটি বিরল হার্টের রোগ, যা গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে বা প্রসবের পরের পাঁচ মাসের মধ্যে মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগে হৃৎপি- দুর্বল হয়ে যায় এবং রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে হৃদস্পন্দন বা শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় এটি বেশ জটিল এবং বিপজ্জনক অবস্থা হতে পারে।
লক্ষণগুলো : পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথির প্রধান লক্ষণগুলো সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস বা প্রসবের পর প্রথম কয়েক মাসে দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে-
১. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
২. শ্বাসকষ্ট বিশেষ করে শোয়া অবস্থায়
৩. পায়ে পানি আসা
৪. বুক ধড়ফড় করা
৫. দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এই লক্ষণগুলো কখনো কখনো গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে যেতে পারে। তাই এটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ : পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথির সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে গবেষণায় বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে- হরমোনাল পরিবর্তন, ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, হৃৎপিন্ডের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, জিনগত কারণ।
ঝুঁকির কারণগুলো : নির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকির কারণ PPCM-এর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- উচ্চ বয়সে গর্ভধারণ (৩০ বছরের বেশি), একাধিক গর্ভাবস্থা (যমজ বা তার বেশি), উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস।
চিকিৎসা : এর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা এবং শারীরিক লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা।
চিকিৎসায় সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতি গৃহীত হয় : হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ ও শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য ওষুধ, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে anticoagulants, ডায়ারেটিস, যা শরীরের অতিরিক্ত পানি কমাতে সাহায্য করে *কিছু ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ডের পেসমেকার বা অন্য ডিভাইস প্রতিস্থাপন লাগে।
প্রতিরোধ ও পরামর্শ : PPCM প্রতিরোধের কোনো নিশ্চিত উপায় নেই। তবে কিছু পদক্ষেপ ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। যেমন- গর্ভাবস্থার শেষ মাসে ও প্রয়োজনে প্রসবের পর ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রি-এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থার সময় কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি, আলোক হেলথকেয়ার, পল্লবী, ঢাকা।