অভিজ্ঞ চার ফুটবলারের অবসরের পর প্রথম ম্যাচে জার্মানি কেমন খেলে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল প্রবল। হাঙ্গেরির বিপক্ষে শুরুর বিবর্ণতা ঝেড়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দিলেন মুসিয়ালা-হাভার্টজরা। দাপুটে জয়ে উয়েফা নেশন্স লিগে শুভসূচনা করল ইউলিয়ান নাগেলসমানের দল।
ডুসেলডর্ফে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘এ’ লিগের তিন নম্বর গ্রুপের ম্যাচটি ৫-০ গোলে জিতেছে চারবারের বিশ্বকাপ জয়ীরা। প্রথমার্ধে নিকলাস ফুয়েলখুগ দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে একবার করে জালের দেখা পান জামাল মুসিয়ালা, ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ, আলেকসান্দার পাভলোভিচ ও কাই হাভার্টজ। সতীর্থদের তিনটি গোলে অবদানও রাখেন মুসিয়ালা। হাভার্টজের দুটি প্রচেষ্টা ক্রসবারে না লাগলে ব্যবধান বাড়তে পারত আরও।
ম্যাচে জার্মানির একচেটিয়া দাপটের চিত্র মেলে পরিসংখ্যানেও। গোলের জন্য তারা শট নেয় মোট ২৩টি, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। আর হাঙ্গেরির ৬ শটের কেবল একটি লক্ষ্যে ছিল। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত গত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও হাঙ্গেরির মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতেছিল তারা।
ইউরোয় জার্মানির পথচলা থামে স্পেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে হেরে। পরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান তাদের চার খেলোয়াড়- গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার, মিডফিল্ডার টনি ক্রুস, ইলকাই গিন্দোয়ান ও ফরোয়ার্ড টমাস মুলার। তাদের ছাড়া নতুন অধ্যায়ের শুরুটা দুর্দান্ত হলো নাগেলসমানের দলের।
ম্যাচে জার্মানি শুরু থেকে পজেশন ধরে রাখায় এগিয়ে থাকলেও, প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে পারছিল না দুই দলের কেউই। ২০তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় জার্মানরা। মুসিয়ালার পাস বক্সে খুঁজে পায় ফুয়েলখুগকে। ওয়ান-অন-ওয়ানে এই ফরোয়ার্ডের সোজাসুজি শট পা দিয়ে ঠেকান হাঙ্গেরির গোলরক্ষক পেতার গুলাসি।
অবশ্য আট মিনিট পরই গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। ডান দিক থেকে সতীর্থের ক্রস দূরের পোস্টে পেয়ে ডাভিড রাউম বল দেন মুসিয়ালাকে। এই ফরোয়ার্ড নিজে শট না নিয়ে পাস দেন ফুয়েলখুগকে। ফাঁকা জালে বল পাঠান ৩১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ৩৩তম মিনিটে দুর্ভাগ্যের কারণে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি। বাঁ দিক থেকে পাসকাল গ্রসের ক্রসে বক্সে হাভার্টজের হেড ক্রসবারে লাগে।
প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে দারুণ সুযোগ হারান হাভার্টজ। মাঝমাঠ থেকে মুসিয়ালার দেওয়া পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, কিন্তু বাঁ পায়ের শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আর্সেনালের এই ফরোয়ার্ড। হাঙ্গেরি তাদের সেরা সুযোগটা পায় ৫৬তম মিনিটে। কাছ থেকে শট নেন বেন্দেগুস বোল্লা, দারুণভাবে রুখে দেন জার্মান মিডফিল্ডার রবার্ট আন্দরিচ।
পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে জার্মানি। হাঙ্গেরির কর্নার ক্লিয়ার করে আক্রমণে ওঠে তারা। ভিরৎজের থ্রু বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন মুসিয়ালা। এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড।
৬৬তম মিনিটে চমৎকার গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করেন ভিরৎজ। বক্সের বাইরে তার শট প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লাগার পর বল পান মুসিয়ালা। সতীর্থের ফিরতি পাস বক্সে পেয়ে নিচু শটে কাছের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন বুন্ডেসলিগার গত আসরের সেরা খেলোয়াড় ভিরৎজ।
৭২তম মিনিটে আবার গোলবঞ্চিত হন হাভার্টজ। এবার তার শট লাগে ক্রসবারে। ৭৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ান দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা পাভলোভিচ। মুসিয়ালার পাসে কাছ থেকে বায়ার্ন মিডফিল্ডারের শট গোলরক্ষকের পায়ে লেগে জালে জড়ায়।
৮১তম মিনিটে সফল স্পট কিকে দলের পঞ্চম গোলটি করেন হাভার্টজ। বক্সে তিনি নিজেই ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পেয়েছিল জার্মানি। চার মিনিট পর হাভার্টজের আরেকটি প্রচেষ্টা গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে ব্যবধান আর বাড়েনি। এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে ৫-২ গোলে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস।