শাহরিয়ার রাজ :
সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই পরিচালিত হয়ে আসছে প্রাইম হাসপাতালের চিকিৎসা কাযক্রম। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কলেজ গেটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এই হাসপাতালটি। যার পুরো নাম প্রাইম অর্থপেডিক ও জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার।
হাসপাতালটিতে সর রকমের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখানে নিয়মিত চলছে চিকিৎসা, হচ্ছে অপারেশনও।
অভিযোগ রয়েছে সরকারী নিয়ম না মেনেই চলছে আইসিইসিউ ও সিসিইউ সেবা। এ ছাড়া পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াই চলছে হাসপাতালটির কাযক্রম। ল্যাব টেকনোলোজিষ্ট ছাড়াই চলছে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। রোগীদের নিকট থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্য রাখারও প্রমাণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
রাজধানীর কলেজগেট খুবই গুরুত্বপূ্ণ একটি পয়েন্ট। যেখানে পাশাপাশি রয়েছে সরকারী বিভিন্ন হাসপাতাল। সামনেই সোহরাওয়া্দী হাসপাতাল, পাশেই অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিইট, তারপাশে কিডনী ইউরোলজী, তারপাশে মানসিক স্বাস্থ্য, এরপর শিশু হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল এমনকি চক্ষু হাসপাতাল। সরকারী এসব প্রতিটি হাসপাতালেই নিযুক্ত রয়েছে প্রাইম হাসপাতালের দালালেরা।
কথিত এসব দালালেররা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসে প্রাইম হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী হাসপাতালে নিযুক্ত আনসাররা রোগী সাপ্লাই দিয়ে মাস শেষে প্রতি রোগীর বিনিময়ে নিচ্ছেন মাসোহারা। তাদের খপ্পরে পড়ে রোগী যায় এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে।
হাসপাতালটিতে মানা হচ্ছে না নীতিমালা। প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়াই ও চিকিৎসা সেবার মান নিম্নমানের হওয়ায় অনেকে এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে শারীরিক ভাবে অবনতির পাশাপাশি আর্থিকভাবে হচ্ছেন নিঃস্ব। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগও অনেকটা নিরুপায়।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় বসে বছরের পর বছর চিকিৎসার নামে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
২০২১ সালের ১০ই আগষ্ট এসব নানা অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অত্র হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করা হয়। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাইম অর্থোপেডিক ও জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিএমডিসি সনদ প্রাপ্ত কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় নাই, পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স ও ছিল না, ল্যাবে টেকনোলজিস্ট নেই, রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি মূল্য রাখার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি রংপুরে হলেও, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মোহাম্মদপুরের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে আবারো তিনি হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
অতি সত্বর হাসপাতালের কার্যক্রম ও গতিবিধি নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনদের।