দেশে মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অটোমেশন পদ্ধতির কারণে দেশের সকল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ কলেজ কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর অর্ধেকেরও বেশি আসনই ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি হুমকির মুখে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টি সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করে সংগঠনটি।
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, ‘অটোমেশন পদ্ধতিটি অন্য দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশর পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। অন্য দেশে এক আসনের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দেয়। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন আগ্রহী।’তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি বিষয়, মনে করুন- একজন শিক্ষার্থী ঢাকায় বেড়ে উঠেছে, পড়াশোনা করেছে। সে এখন ঢাকার যেকোনো একটি মেডিকেলে পড়তে চায় তার সামর্থ্য আছে। তাকে তার পরিবার টাকা দিচ্ছে। তাকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরিশাল। এখন এই ঢাকার ছেলে কি বরিশাল গিয়ে অথবা অন্য কোনো জেলায় গিয়ে পড়বে? সে মেডিকেলে পড়ার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে, নয়তো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ছয় হাজার ২০০ সিটের মধ্যে এমন কারণে আমরা এক হাজার শিক্ষার্থী মিস করেছি।’
সংগঠনটির সভাপতি মুবিন খান বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন অটোমেশন কোয়ালিটি মেইনটেইনের জন্য করা হয়েছে। অথচ খোঁজ নেন ৪৯ হাজারের একটু বেশি। শেষ নম্বরে যে শিক্ষার্থী তাকেও ভর্তির জন্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থী মিলছে না। আবার পোর্টাল খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা একটা ভঙ্গুর অবস্থা! একটা পরিবার নিজেদের টাকা দিয়ে নিজের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করবে, সেটা হচ্ছে না। তাকে সিস্টেম দিয়ে দেবে খুলনা, চট্টগ্রাম বা যেকোনো জায়গায় দিয়ে দেবে, এটা কেমন? এসব কারণে প্রাইভেটে পড়ার আগ্রহ কমছে, আমরা শিক্ষার্থী পাচ্ছি না। তারা কোনো ছাত্র নিতে পারছে না। এসব বিষয়ে আগামী ২৫ তারিখে একটি গোলটেবিলের আয়োজন করেছি। যেখানে এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই থাকবেন। আমরা এই সংকট মোকাবিলা, উত্তরণ এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পদ্ধতির কারণে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে হচ্ছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। ফলে পড়াশোনার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় গরিব মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে পারছে না। এমনকি অনেকে ভর্তি হয়েও বিপাকে পড়েছে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে। ছয় হাজার ২০০ আসনের বিপরীতে যেখানে প্রতিবছর তিন শতাধিক ছেলেমেয়ে এই খাতে ভর্তি হলেও বর্তমানে অটোমেশন পদ্ধতির কারণে অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। অথচ এ পদ্ধতি চালুর পূর্বে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ইন্টারভিউ দিতে আসত, যাদের অধিকাংশই স্থানীয়।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার খান এমপি বলেন, ‘ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর ও কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইলেও মেধাবী কোটার বরাদ্দকৃত পাঁচ-সাতজন ছাত্র-ছাত্রীও তারা পাচ্ছে না। অথচ এই তথাকথিত অটোমেশন চালুর পূর্বে ২০১৭-২২ সালের তথ্য ও উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উল্লেখিত আসনের বিপরীতে প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী ইন্টারভিউ দিয়েছে। এই অটোমেশনের কারণে অর্ধেকেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী ইন্টারভিউ দিতে আসছে না। যার ফলশ্রুতিতে দেশের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষায় বিমুখ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ কোটারও একই অবস্থা। পূর্বে যেখানে ৪০ হাজার জন পাস করলে বেসরকারি মেডিকেলের শতভাগ আসন পূর্ণ হয়ে যেত। যা কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকা বা পার্শ্ববর্তী শহরের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা পূরণ হতো। এই শিক্ষা পদ্ধতি দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। বিএমডিসি কর্তৃক প্রণীত হাজারো সমস্যাসংবলিত অটোমেশন পদ্ধতির জন্যই নিজ এলাকায় তাদের কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল কলেজে ভর্তি হচ্ছে না শত শত ছাত্র-ছাত্রী।’
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল শিক্ষার অটোমেশনের এই সমস্যাটি আরও বহুমুখী সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা উপার্জনকারী একমাত্র শিক্ষা খাত মেডিকেল শিক্ষালয়ে বিদেশি প্রায় দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করার জন্য আসে। অটোমেশনের কারণে সব ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়া ও ধীরগতিতে ক্লাস শুরু করার কারণে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরাও বাংলাদেশ থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ অটোমেশন প্রক্রিয়াটি অতি দ্রুত সংশোধন বা বাতিল করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ার সুযোগের জন্য সংগঠনটির পক্ষে সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি।’