বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরায় বসবাসরত ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে এই বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। কর্মসূচির আওতায় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় আপাতত শুকনা খাবারসহ আরও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ২৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বসুন্ধরায় অবস্থানরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের পাশে থাকায় ধন্যবাদ জানান।
গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় বসুন্ধরায় বসবাসরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বন্যার্তদের পাশে থাকার জন্য বসুন্ধরার কাছে সহায়তা চান শিক্ষার্থীরা। তাদের আবেদনে খুব দ্রুত সাড়া দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ম্যানজমেন্ট অ্যান্ড এইচআর বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. শিবলি আহমেদ খান ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এইচআর বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রফেসর ডা. মোহাম্মাদ আলী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পকেটের চিফ বিজনেস অফিসার শাহেদ মোহাম্মাদ।
জানা যায়, দুই কেজি টোস্ট বিস্কুট, ৪ পিস ওরস্যালাইন, ২ কেজি চিড়া, ২ কেজি গুড়, ২ কেটি মুড়ি, ২ লিটার পানির ২ হাজার প্যাকেট নিয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) ভোরে রওনা হবে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দল।
এর আগে, শুক্রবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের ৬টি গ্রুপ করা হয়। যারা কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনীসহ বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে যাবেন। এছাড়াও আরো আলাদা আলাদা গ্রুপ করা হয়। যারা ঢাকায় ত্রাণের পণ্যগুলো প্যাকেট করবেন। নিউজ টোয়েন্টিফোরের জিএম অ্যান্ড হেড অব মার্কেটিং ইয়াসিন পাভেল বলেন, আপাতত শুকনা খাবারসহ আরও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ২৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এরই মধ্যে ১২টি নৌকা ও স্পিডবোটের ব্যবস্থাও করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
তিনি আরও বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতায় পিছপা হবে না বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরার শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছাবেন। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে কাজ করবে বসুন্ধরা গ্রুপ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা আইসিসিবি এর ১ নম্বর হলে গিয়ে দেখা যায়, বসুন্ধরায় অবস্থিত বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা পুরো উদ্যোমে কাজ করছেন। কেউ গুড় প্যাকেট করছেন তো, কেউ চিড়া। আর কেউ ধরে আছেন বস্তার মুখ। যেখানে সব আইটেম এক বস্তায় পুরে নেওয়া হচ্ছে আরেক পাশে। ট্রলিতে করে নিয়ে সেখানে বস্তার মুখ বেঁধে রাখা হচ্ছে সারি সারি করে।
শিক্ষার্থীরা বলছিলেন- মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন কাজে কোনো ক্লান্তি আসে না। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান সজল বলেন, আমরা দুপুরে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সবাই মিলে মিটিং করেছি। পরে কয়েকটা গ্রুপ বানানো হয়। ভলানটিয়ার গ্রুপগুলো কেউ ত্রাণ বিতরণে যাবে, কেউ সবকিছুর যোগাযোগ রক্ষা করবে আর বাকিরা ঢাকায় প্যাকেজিংয়ের কাজ করবে।
কথা হয় ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানের সাথে। তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বন্যার্তদের কাছে যেতে না পারলেও প্যাকেজিং করতে পেরে নিজেকে কিছুটা সান্ত্বনা দিতে পারছি। আমি বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে কাজ করছি। কিন্তু বিশ্বাস করেন একটুও ক্লান্তি লাগছে না। মানুষের বিপদে পাশে থাকার সৌভাগ্য সবার হয় না।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন যে বন্যা পরিস্থিতি চলছে এমন সময় ঘরে বসে থাকা যায় না। মানুষের বিপদের এমন সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তার সঙ্গে আমরা শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা সব আলাদা আলাদা পণ্যগুলো এক বস্তার মধ্যে নিয়ে একটা প্যাকেজ করছি। আমাদের কয়েকটা গ্রুপ এখানে প্যাকেজিং করবে। অন্য গ্রুপগুলো ভাগ ভাগ হয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে চলে যাবে। এভাবে এই বন্যা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। ভবিষ্যতেও যদি এমন কোনো দুর্যোগ আসে তবে বসুন্ধরার সহায়তায় আমরা সবার পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।