ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফোনালাপ হয়েছে। উভয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে কথা হয়েছে। এ সময় নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদি এ কথা জানান। ওই পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে ফোন পেয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। আলাপে একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। তিনি আমাকে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন।’ গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার টেলিফোনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ড. ইউনূস ফোনকল এবং তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই টুইট (এক্স) পোস্ট করায় নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ১৫ আগস্ট পালিত ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় নেতা এবং ভারতীয় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকারের প্রতি শুভকামনা ব্যক্ত করেন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। নরেন্দ্র মোদি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তিনি তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তাঁর নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তার সরকার সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরে এসে সংখ্যালঘু সুরক্ষার ইস্যুতে মাঠপর্যায় থেকে রিপোর্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধ্যাপক ইউনূসকে আজ ১৭ আগস্ট নয়াদিল্লিতে আয়োজিত তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা থেকে অনলাইনে সম্মেলনে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ফলে তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব এবং তাঁর সরকার ছাত্র ও জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা পূরণ করবে। তাঁর সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এদিকে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে কথা হয়েছে। উভয় দেশের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিয়েছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ওইদিনই তাঁকে শুভকামনা জানিয়ে এক্সে পোস্ট দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এদিকে আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবে কি না। জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘এটা কাল্পনিক প্রশ্ন। কতদিন উনি থাকবেন ভারতে! জবাব হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন স্বল্প সময়ের নোটিসে তিনি ভারতে এসেছেন।’ বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছুই স্বাভাবিক হবে। তখন ভিসা দেওয়া নিয়মিত হবে। এখন কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনে সীমিত মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে।