বারো মাসের তেরো পার্বনের দেশে আবারো বছর ঘুরে এসেছে দুর্গাপূজা। রাত পোহালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচে, চণ্ডীপাঠ, ঢাকঢোল, শঙ্খের শব্দ আর উলুধ্বনি সুরে শুরু হবে উৎসব। কয়েক ঘন্টা পরেই মণ্ডপে মণ্ডপে পর্দা উঠবে সার্বজনীন দুর্গোৎসবের। পূজোর আমেজে প্রস্তুত ঢাকেশ্বরী মন্দিরও।
আজ ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালির এ মহোৎসব। সকাল আটটা এক মিনিটে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ হয়েছে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। এর আগে গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের শারদীয় উৎসবের মূলপর্ব।
আজ বুধবার সরজমিন রাজধানীর শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ঘুরে দেখা যায়, মন্দিরের সবগুলো ভবন নতুন রঙে রাঙানো হয়েছে। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে লাগানো হয়েছে শামিয়ানা। দর্শনার্থীদের জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জিগজ্যাগ। পুরো মন্দির জুড়ে আলোকসজ্জার আলোতে সজ্জিত করা হয়েছে। পুরো মন্দিরে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরে আরো দেখা যায়, এরমধ্যেই পূজোর আমেজ বিরাজ করছে ঢাকেশ্বরী এলাকা জুড়ে। দর্শনার্থীরা সেজেগুজে ছবি তুলতে চলে এসেছেন এরমধ্যেই। মন্দির এলাকা জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলায়ে ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মন্দিরে নিরাপত্তা দিতে একটি কন্ট্রোলে রুম খুলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সহ আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
পূজায় ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হলেই আমরা খুশি। এটি বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। সেই শুরুর লগ্নে এদেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মিলে বসবাস করছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে আমরা চাই না কোনো বিবাদ-বিভাজন তৈরি হোক। এবারের পূজা মহামিলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে আশা করছি।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, শঙ্কা রয়েছে তবু বেশ আশাবাদী পূজা নিয়ে। গ্রামে পূজার সংখ্যা কমেছে এবার। বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ এসব কারণে কিছু মণ্ডপে পূজা হচ্ছে না এবার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি দেখে ভালো কিছু আশা করছি। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে যৌথবাহিনীও মাঠে থাকবে।
জয়ন্ত কুমার দেব আরও বলেন, এবার সারা দেশে মোট ৩১ হাজার ৪৬১ টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরে ২৫৩টি পূজার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। যা গতবার ২৫২টি ছিল কিন্তু এবার মতিঝিলে একটি নতুন পূজা হবে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে। আমি বিশ্বাস করি গতবারের চেয়ে এবার সুন্দর এবং ভালো পূজা হবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের এডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছে এখনো। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা শঙ্কা নেই। পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ যৌথবাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে। আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করে যাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কোনো অপশক্তি মাথার চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
৫ দিনব্যাপী আয়োজনে যখন যা হবে
গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। তবে উৎসব শুরু হবে ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের শেষ হবে দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় আর স্বর্গে গমন করবেন ঘোড়ায় চড়ে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর (২৪ আশ্বিন) সকাল ৮টা ১ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ হয়েছে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ; ১০ অক্টোবর (২৫ আশ্বিন) সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। এরপর হবে বস্ত্র বিতরণ; ১১ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন) সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজার কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা সন্ধিপূজা আরম্ভ সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে। এরপর মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে; ১২ অক্টোবর (২৭ আশ্বিন) সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় হবে আরতি প্রতিযোগিতা; ১৩ অক্টোবর (২৮ আশ্বিন) দুপুর ১২টায় হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিকেল ৪টায় বিজয়া শোভাযাত্রা।