প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ উঠেছে। এর ব্যবহার জীবনকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দময় করে তুলেছে। অফিস কিংবা বাড়ি, সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রয়োজন। তাই এখন ওয়াইফাই রাউটারের চাহিদাও বাড়ছে। কারণ, একদিকে যেমন একাধিক ডিভাইস এক সঙ্গে কানেক্ট করা যায়, তেমন ঘরের যে কোন প্রান্তে বসে ইন্টারনেট সার্ফিং করা যায়। তবে রাউটার বসালেও বেশ কিছু কারণে ইন্টারনেটের স্পিড ভালো মেলে না। বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ওয়াই-ফাইয়ের গতি নির্ভর করে। কিছু কৌশল ব্যবহার করে চাইলেই ওয়াই-ফাইয়ের গতি বাড়ানো যায়। চলুন জেনে নেই এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
রাউটার রাখুন সঠিক জায়গায়
দ্রুতগতির ওয়াই-ফাইয়ের জন্য রাউটারের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পুরো ঘরে সমান গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই রাউটার ঘরের মাঝামাঝি স্থানে রাখতে হবে। এতে সব দিকে সমানভাবে ওয়াই-ফাই সিগন্যাল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া রাউটারের আশপাশে যত কম দেয়াল থাকবে, ততই ওয়াই-ফাইয়ের গতি বেশি হবে। খুব কাছাকাছি দূরত্বে ভারী ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও ওয়াই-ফাইয়ের গতি কমে যেতে পারে। রাউটারের অ্যানটেনা উল্লম্বভাবে রাখলে ওয়াই-ফাইয়ের গতি বেশি পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট সংযোগ পরীক্ষা
ওয়াই-ফাইয়ের গতি নিয়ে অভিযোগ করার আগে প্রথমেই আপনার ঘরে বা অফিসে থাকা ইন্টারনেট সংযোগ এবং রাউটারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। ইন্টারনেটের গতি ঠিক থাকলে রাউটারের সঙ্গে ইথারনেট কেব্ল যুক্ত করে সরাসরি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।
রাউটারের ফার্মওয়্যার হালনাগাদ
রাউটারের ফার্মওয়্যার ও নিরাপত্তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। রাউটারের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন্টারফেস থেকে সহজেই ফার্মওয়্যার হালনাগাদ করা যায়। তবে পুরোনো মডেলের রাউটার হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে ফার্মওয়্যার ফাইল নামিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন্টারফেসে আপলোড করতে হবে।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা
আপনার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক যদি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে বা পাসওয়ার্ড দুর্বল থাকে, তবে আপনার অজান্তেই অনেকে তা ব্যবহার করায় ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ওয়াচার ব্যবহার করে খুব সহজে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা জানা যায়। এ ছাড়া রাউটারের অ্যাডমিন ইন্টারফেসে দেখে নিতে পারেন কোন ডিভাইসটি বেশি ডেটা ব্যবহার করছে।
রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি জানা
নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইন্টারফেসে দেখে নিন আপনার রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি কত। সাধারণত ২ দশমিক ৪ গিগাহার্টজের রাউটার বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটারে ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়। ফলে ওয়াই-ফাইয়ের গতি বাড়াতে প্রয়োজনে ডুয়েল ব্যান্ডের রাউটার ব্যবহার করতে পারেন।
রেঞ্জ এক্সটেন্ডার দিয়ে ওয়াই-ফাইয়ের পরিধি বৃদ্ধি
ওয়াই-ফাইয়ের সিগন্যালের পরিধি বৃদ্ধির জন্য রেঞ্জ এক্সটেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন। বাসা যদি অনেক বড় হয়ে থাকে, তবে একটি রাউটার দিয়ে সব জায়গায় সমান সিগন্যাল পাওয়া যায় না। এ ছাড়া একাধিক দেয়ালের কারণেও ওয়াই-ফাইয়ের গতি কমে যায়। ওয়াই-ফাই সিগন্যাল বাড়াতে আপনি রেঞ্জ এক্সটেন্ডার বা মেশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন। রেঞ্জ এক্সটেন্ডার রাউটার থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করার পর পুনরায় সম্প্রচার করে। ফলে এটি রিপিটার হিসেবে ওয়্যারলেস রাউটারের সিগন্যালের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে।
স্পিড টেস্ট
স্পিড টেস্ট করে দেখুন আপনি ঠিকমতো ইন্টারনেট গতি পাচ্ছেন কিনা। যদি না পান, তাহলে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চ্যানেল পরিবর্তন
ইন্টারনেট গতির ক্ষেত্রে ইন্টারফারেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক থেকে আসা সিগন্যালের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের কারণেও ইন্টারনেটের গতি কমতে পারে। আর তাই ভালো মানের রাউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম ঘনত্ব থাকা চ্যানেল নির্বাচন করে সিগন্যাল গ্রহণ করে। কিন্তু পুরোনো মডেলের বা কম দামি রাউটার নির্দিষ্ট চ্যানেল ব্যবহার করে। ফলে ওয়াই-ফাইয়ের গতি কমে যায়। সমস্যা সমাধানে রাউটারে কম ঘনত্বের চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে।