কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন শুধুমাত্র নিবন্ধ বা ই-মেইল লেখার কাজেই সীমাবদ্ধ নয়; এআই দিয়ে প্রোগ্রামের জটিল কোড লিখে সাইবার অপরাধীদের হাতেও বিপজ্জনক অস্ত্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে, একদল হ্যাকার অত্যাধুনিক এআই ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার তৈরি করছে, যা তাদেরকে সাইবার আক্রমণ পরিচালনায় নতুনভাবে সক্ষম করে তুলেছে। এই আক্রমণগুলোর ফলে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নতুন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন।
সম্প্রতি গবেষকরা ‘এসিঙ্কর্যাট’ নামক ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত সাইবার হামলার খোঁজ পেয়েছেন, যা বিশেষভাবে এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ফ্রান্সের সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ই-মেইলের মাধ্যমে এই ম্যালওয়্যার ছড়ানো হয়। গত জুনে, এইচপির সাইবার নিরাপত্তা দল এই ম্যালওয়্যারের বিশদ বিশ্লেষণ করে জানতে পারে যে, এআই ব্যবহার করে খুব জটিল কোডসমৃদ্ধ ম্যালওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে, যা প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে আক্রমণ করতে সক্ষম।
হ্যাকাররা এই আক্রমণে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড জিপ ফাইল ও এইচটিএমএল স্মাগলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যার ফলে প্রচলিত সিকিউরিটি স্ক্যানের মাধ্যমে এ ধরনের ম্যালওয়্যার শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণত ম্যালওয়্যার সনাক্তকরণে নিরাপত্তা ফিল্টার যে কাঠামো অনুসরণ করে, এআই দিয়ে তৈরি কোড সেই কাঠামোকে আরও দক্ষতার সাথে পাশ কাটিয়ে যায়। এই নতুন ধরনের ম্যালওয়্যার তৈরি ও ব্যবহারের ফলে অল্প দক্ষতাসম্পন্ন হ্যাকাররাও এখন অত্যন্ত জটিল সাইবার আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই এর মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যালওয়্যার কোড লিখে নেওয়া যায়। এর ফলে, সাইবার আক্রমণের ধরনও দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব। অপারেটিং সিস্টেমের ভিন্নতা, যেমন লিনাক্স বা উইন্ডোজ, এবং আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে এআই দিয়ে ম্যালওয়্যার আরও নিখুঁতভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে, প্রচলিত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এসব ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই প্রযুক্তিগত বিপর্যয় মোকাবেলায় নতুন ধরনের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পদ্ধতি প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।