দেশের সংস্কারের জন্য ছয় বিশিষ্টজনের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশ্লিষ্ট কমিশনের অন্য সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। কমিশন দ্রুতই সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন নবগঠিত কমিশনের প্রধানরা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিছু কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, আমরা তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেব। সব অংশীজনের মতামত নিয়েই তা করতে হবে। কমিশনে কয়জন সদস্য থাকবেন, অন্য সদস্য কবে নিয়োগ হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১ অক্টোবরের আগে হতে হবে। তবে কতজন সদস্য থাকবেন সে বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। তিনি বলেন, নিশ্চিয় একটা প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সেখানে সব কিছুই থাকবে। এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, প্রথমে কমিশন গঠন হবে। এর পর ১ অক্টোবর কাজ শুরু হবে। আমি আশা করছি, প্রথমেই আমরা নির্ধারণ করব, আমরা কী কী কাজ করব। সেই বিষয়ে রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং সেই রোডম্যাপ ধরেই অগ্রসর হব আমরা। তিনি বলেন, আমরা এতদিন ধরে কাজ করছি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সুসংহত করার বিষয়ে। এটা তার স্বীকৃতিস্বরূপ।
এ বিষয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেছেন, এখন কাগজপত্র, চিঠি পাইনি। গাইড লাইন কী হবে তা-ও জানি না। অপেক্ষা করেন কাগজপত্র হাতে পাই। তার পর বলব। দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা এখনো হাতে পাইনি। তাই কীভাবে কাজ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন এই ক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু সংস্কার পরিকল্পনা আছে। কমিশনের অন্য সদস্যরা যোগ দিলে তারাও কিছু প্রস্তাবনা দেবেন। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা কী ছিল সেগুলো দেখতে হবে। সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেসব সৎ ও উদ্যমী কর্মকর্তাকে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে সব সময় কোণঠাসা করে রাখা হয় তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এসব মিলে একটা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করব। নিজের ব্যক্তিগত সংস্কার চিন্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, দুদককে স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মানুষের আস্থার জায়গায় আনাই প্রধান কাজ। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব আইন যুগোপযোগী করা যেমন জরুরি, তেমনি দুদকের নিয়োগ প্রক্রিয়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুদকের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পূরক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারেও হাত দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মতো প্রতিষ্ঠান যেগুলোর উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি বা অর্থ পাচারের মতো ঘটনায় দুদকের সঙ্গে সম্পূরক ভূমিকা পালন করার কথা, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে না তাকিয়ে শুধু দুদককে সংস্কার করলে কিছুই হবে না। এ ছাড়া দুদকের জন্মলগ্ন থেকে যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক যে আস্থার সংকটে ভুগছে, অর্পিত দায়িত্ব পালনে দুদকের সক্ষমতার ঘাটতির জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে। কেন এই ঘাটতি, কেন দুদক ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না, সেগুলো দেখতে হবে। তিনি বলেন, দুদকের দুর্বলতার অন্যতম একটা দিক হচ্ছে- শুরু থেকে কমিশনার থেকে উচ্চ পদে যেসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সব দলীয় রাজনীতির বিবেচনায়। ফলে কর্মকর্তাদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত থাকতেন। এতে ক্ষমতাসীন বা যারা ক্ষমতার সংস্পর্শে থাকতেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতেন না। এই জায়গাগুলো কীভাবে ঠিক করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। এ ছাড়া দুদকের কার্যক্রমে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এটা হওয়ার কথা ছিল না। এটা দূর করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইনগুলো পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী করতে হবে, যাতে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। তিনি বলেন, দুদকের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সেটা হয়নি। বিষয়টা দেখতে হবে। দুদকের সরাসরি নিজস্ব আইনের বাইরে মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, কর আইনসহ কিছু সম্পূরক আইন দুদকের কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে, দুদকের কর্মক্ষমতাকে খর্ব করে। এগুলো সংশোধন করতে হবে।