যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অর্থনীতি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, তার শাসনামলেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। বিপরীতে, ডেমোক্রেট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দাবি করছেন, বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। নিচে দুই প্রেসিডেন্টের আমলে বিভিন্ন সূচকের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধি:
বাইডেনের প্রথম দুই বছরে মূল্যস্ফীতি ৯.১ শতাংশে পৌঁছায়, যা ২০২২ সালের জুনে রেকর্ড করা হয়। ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও এটি সঠিক নয়, কারণ ১৯৮১ সালে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি ছিল। বাইডেনের শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.২ শতাংশ, যা ট্রাম্পের ২.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি। করোনা মহামারির প্রভাবে দুই প্রেসিডেন্টের শাসনামলেই অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তবে জিডিপির মানদণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র জি-৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
কর্মসংস্থান:
কোভিড-১৯ এর আগে ট্রাম্পের প্রথম তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ লাখ নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের মহামারির কারণে ব্যাপকভাবে চাকরি হারানোর ঘটনা ঘটে। বাইডেনের আমলে শ্রমবাজারে ১ কোটি ৬০ লাখ চাকরি যুক্ত হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এটিকে তাদের শাসনামলের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে। ১৯৩৯ সাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থান খাতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।
বেতন-মজুরি:
ট্রাম্পের সময়ে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছিল, বিশেষ করে নিম্নস্তরের কর্মীদের মধ্যে। মহামারির কারণে মজুরি বৃদ্ধি হলেও, বাইডেনের শাসনামলে মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কর্মীদের আয় দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষণ:
মার্ক স্ট্রেইন, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেছেন, বাইডেনের আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে ট্রাম্পের দাবি, তার শাসনামলেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল, যা সম্পূর্ণ সত্য নয়। বাইডেন প্রশাসনও তাদের শাসনামলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য দাবি করতে পারে।
নির্বাচনের আগে এসব অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বিতর্ক চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলো কার পক্ষে কাজ করবে, তা সময়ই বলে দেবে।