বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আজ আবারও বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে তিনি আলোচনা করবেন। বৈঠকে আগামী কত দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে’ একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করতে পারবে সরকার- সে বিষয়ে আলোচনা করবে দলগুলো। আজকের এ আলোচনার পর অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। আজকের বৈঠকেও আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের কেউ উপস্থিত থাকবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। সেদিনও আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের কেউ বৈঠকে ছিলেন না। গত বৃহস্পতিবারও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, দেশকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন করবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।
এর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৮ আগস্ট রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন তার সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, এবি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, এনডিএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেন। আবার গত ২৯ আগস্ট বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আজকের বৈঠকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ (নূর), গণঅধিকার পরিষদ (ড. রেজা কিবরিয়া), ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নিতে পারে।
এবিষয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বৃহস্পতিবার জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখবে। তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দেবে- তা সরকার গ্রহণ করবে।
আজকের বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন? জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে যেন বিসর্জন দেওয়া না হয়- সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার যাতে সফল হয় সে বিষয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা করব। জনগণের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করব। ব্যক্তিগত বা দলীয় কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না। আমি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। দখল ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ দেখতে চাই। সুশাসন ও ন্যায়বিচার যাতে নিশ্চিত হয়, সেসব বিষয়ে আলোচনা করব।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আজকের বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চ বা নাগরিক ঐক্য অংশ নিচ্ছে না। তাছাড়া ৮ কিংবা ২৯ আগস্টের বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছিল- তারা কেউ অংশ নিচ্ছেন না। যারা গত বৈঠকে অংশ নেননি, তারা হয়তো আজকে অংশ নিতে পারেন। তাছাড়া এই সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়, ছাত্র-জনতার ম্যান্ডেটে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে তারা আজকের বৈঠকে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, সমসাময়িক বিষয়াদি ছাড়াও নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে ঘোষণা হবে সেটি জানতে চাওয়া হবে।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, এ সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়, এটা ছাত্র-জনতার ম্যান্ডেটে গঠিত সরকার। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা- প্রথমেই পুলিশ বিভাগকে কার্যকর করা। পর্যায়ক্রমে আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো সংস্কার করা। তারা কী কাজ করবেন তার একটা দিকনির্দেশনা জাতির কাছে উপস্থাপন করা। কবে নাগাদ জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে- তার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা। আমরা এসব বিষয়সহ নানাবিধ বিষয় প্রস্তাবনা আকারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরব।
বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিরা মূলত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ভাবনা, নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা বলেছেন, এ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরু করার ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেন। এ সময় তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন তারা। একই সঙ্গে বিএনপি নেতারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, বর্তমান সরকার সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে এবং তারা এর সমন্বিত অংশীদার হবেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আজ শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পুনরায় বৈঠকের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। আলোচনার পর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। তারপরই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য একটি রোডম্যাপ জনগণের সামনে পেশ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এর কয়েক দিন আগ থেকেই দলীয় কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন বিএনপি মহাসচিব। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ অংশ নেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন।