সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই ফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ কেজি স্বর্ণের চালান উদ্ধার করেছে এভিয়েশন নিরাপত্তা কর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গতকাল সকালে বিমানবন্দরের সম্মুখস্থ গাড়ি পার্কিং থেকে হোসাইন আহমদ (২০) নামের এক যাত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে তার ব্যাগেজ তল্লাশি করে স্বর্ণের এই চালান জব্দ করা হয়। আটককৃত স্বর্ণের মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, দুবাই থেকে বাহকের মাধ্যমে আসা ওই চালানের মূল মালিক ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কড়াকড়ি থাকায় স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য আগরওয়ালা সিন্ডিকেট বেছে নিয়েছে ওসমানী বিমানবন্দরকে। কিন্তু নানা কৌশলে আনা চালানটির শেষ রক্ষা হয়নি। এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের চোখ এড়াতে পারেনি চালানটি।
স্বর্ণের চালানটির সঙ্গে আটক দুবাই ফেরত যাত্রী হোসাইন আহমদ গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি, হোসাইন আহমদ ওই স্বর্ণের চালানের বাহক।
সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৮টার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট (বিজি ২৫২) ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন হোসাইন আহমদ। তার পাসপোর্ট নং- ইএউ- অ১৫১৯৩২৪৬।
স্বর্ণের চালান আটকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোসাইন আহমদ নামের ওই যাত্রী গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে বিমানবন্দরের সামনের গাড়ি পার্কিংস্থলে চলে যান। কিন্তু তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় বিমানবন্দরের এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় গ্রিন চ্যানেলে নিয়ে যান। সেখানে তার দুটি লাগেজ তল্লাশি করে ৪টি জুসার ও ড্রিল মেশিনের ভিতর থেকে ১০৫ পিস স্বর্ণের বার ও স্বর্ণের ৪টি চাকটি জব্দ করা হয়। পরে হোসাইন আহমদকে আটক করা হয়।
ওসমানী বিমানবন্দর ও এয়ারফ্রেইট বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. সাজেদুল করিম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যে ধারণা করা যাচ্ছে, ওই যুবক স্বর্ণের চালানের বাহকমাত্র। তাকে সংশ্লিষ্ট থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন ১৫ কেজি ৯১০ গ্রাম বলে জানান মো. সাজেদুল করিম।
এদিকে, প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের এই চালানটি আটকের পর চালানের মালিক হিসেবে ডায়ম- ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। সূত্র জানায়, দুবাই-বাংলাদেশ স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের মুলহোতা দিলীপ আগরওয়ালা। ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দিলীপ আগরওয়ালা দুবাই থেকে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসতেন। মাঝে মধ্যে তিনি চোরাচালানের জন্য ওসমানী বিমানবন্দরও ব্যবহার করতেন। নানাভাবে দুবাই ফেরত শ্রমিক ও ভ্রমণকারীদের প্রলুব্ধ করে নানা কৌশলে নিয়ে আসা হতো স্বর্ণের চালান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি করা হয়। এরপর থেকে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট কৌশল পাল্টিয়ে শাহজালালের পরিবর্তে ওসমানী বিমানবন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয়।
সূত্র আরও জানায়, জুসার ও ড্রিল মেশিনের ভিতরে বিশেষ কৌশলে নিয়ে আসা স্বর্ণের চালানটি বিমানবন্দরের বাইরে থেকে আগরওয়ালার চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই ধরা পড়ে যায় চালানটি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্বর্ণের চালানের সঙ্গে আটক যাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। চালানের মূল মালিক শনাক্তে পুলিশ কাজ করবে। দিলীপ আগরওয়ালা বা অন্য কেউ এই চালানের মালিক হলেও তা খুঁঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।’