সড়কে চাঁদার টাকায় হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। এমন অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত প্রায় আড়াই বছর আগেই হাতে পান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান হলেও অজ্ঞাত কারণে পরে আর মামলা হয়নি। এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার নেতৃত্বে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। এভাবে বছরের পর বছর চাঁদা আদায় করে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন সড়ক পরিবহনের ওই নেতা। দুদকসূত্র জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে চার বছর আগে অনুসন্ধানে নামেন তারা। প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিসও দেওয়া হয়। ওই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পান অনুসন্ধান কর্মকর্তা। যাচাইবাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে দুদকে প্রতিবেদন জমা দেন আড়াই বছর আগে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটি শেষ পর্যন্ত থমকে যায়।
জানা যায়, ২০১৯ সালে এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিসহ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এর আগে একই বছরের ২৭ অক্টোবর পরিবহন শ্রমিকনেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এরপর ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন ইসমাইল হোসেন বাচ্চু। এ সময় বাচ্চু দাবি করেন, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রতিদিন ঢাকার পরিবহন খাত থেকে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। ওই সময় অভিযোগসংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত দুদকেও জমা দেওয়া হয়। এ অভিযোগে বলা হয়, তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন, গাজীপুরে পূর্বাচলের আশপাশ এলাকায় কয়েক শ বিঘা জমি, কক্সবাজারে আবাসিক হোটেলের মালিকানাও রয়েছে তার। এ ছাড়া ময়মনসিংহ সদর ও ভালুকায় শত বিঘা জমি ও একাধিক কলকারখানা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের শুরুতে এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রথমে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়সালকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যে তিনি শিক্ষা ছুটিতে গেলে আরেক উপপরিচালক মো. নুরুল হুদাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সূত্র জানান, অনুসন্ধানের শুরুতে দুদক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সাল পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সম্পদের নথিপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংকসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠান। এরপর কর্মকর্তা বদল হয়ে উপপরিচালক নুরুল হুদা দায়িত্বে এলে তিনি এ অনুসন্ধান এগিয়ে নেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিআরটিএ, নিবন্ধন অধিদপ্তর, ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং পাঁচ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজার পৌরসভা এবং জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুরুল হুদা। এরপর ২০২১ সালের জুনে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চাশমে জাহান নিশির নামে থাকা সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস দেওয়া হয়। ওই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। ওই বিবরণী যাচাইবাছাই শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নুরুল হুদা।