চক্রান্তকারীরা সরকারের মধ্যে বসে আছে দাবি করে তাদেরকে অবিলম্বে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্রুততার সঙ্গে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব চক্রান্তকারীরা সরকারের মধ্যে বসে আছে, তাদেরকে অবিলম্বে বের করে দিতে হবে। তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তারা কাজ করেছে খুনি শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে। তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে’।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পলাতক খুনি শেখ হাসিনাসহ তাঁর দোসরদের যথাযথ বিচারের দাবিতে’ এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা আবারও জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসররা সারা দেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে গেছেন। তাদের বিচার চাই। তাদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইনে। কারণ তারা গনহত্যা চালিয়েছে। যারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, টাকা পাচার করেছে তাদের বিচার করতে হবে। যাদের ওপর জনগণ আস্থা দিয়েছে, একটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দেবে। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেবে। এই সরকারের কাছে বিচার চাই। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটা সরকার গঠন করবে। আমরাও সেটা চাই। আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও এই সরকারকে দিতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন কেউ যেন বলতে না পারে আমরা খারাপ কাজ করেছি। সবাই একত্রিত হবেন। ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। তাদের সব চক্রান্তকে রুখে দেবেন। এই সরকারকে সাহায্য করবেন। এটা গলঅভ্যুত্থানের সরকার, আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সেই সহযোগিতা দেব, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন, কিন্তু তারেক রহমান এখনো দেশে ফিরে আসতে পারেননি। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কোনো মামলা থাকবে না। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে হাসিনাকে তাড়িয়েছি, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে এদেশে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা আনব।
তিনি বলেন, একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। সেই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করছি। আমরা লড়াই করছি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে। নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এখন নতুন একটা ধুয়া তুলেছে সেই ষড়যন্ত্রকারীরা যে মাইনরিটির ওপর অত্যাচার করছে। বাংলাদেশে কোনো মাইনরিটি নেই। বাংলাদেশের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে একসঙ্গে এদেশ স্বাধীন করেছি। সেই সূত্রে সবাই এদেশের নগরিক। কিন্তু তাদেরকে ক্ষেপিয়ে ঢাল বানিয়ে আরেকটা কৌশল অবিষ্কার করে কীভাবে অস্থতিশীলতা তৈরি করা যায়, সেই চেষ্টা আওয়ামী লীগ করছে। তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল তৈরি করে আবার যদি ওই ভারতের সাহায্য নিয়ে ঢুকে পড়া যায়, তাহলে হয়তো তারা রক্ষা পাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ’৫২, ’৬২ দেখেছেন, ’৬৯, ’৭১, ’৯০ সাল দেখেছেন, এখন ২০২৪ দেখেন। এদেশের মানুষ কীভাবে জ্বলে উঠতে পারে, ফুঁসে উঠতে পারে, কোনো অশুভ শক্তি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না। সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ভালোয় ভালোয় ষড়যন্ত্র না করে আত্মসমর্পণ করেন। যারা বাইরে আছেন, এদিক-ওদিক করছেন, তারা প্রতাপশালী আইনমন্ত্রী, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দেখুন কী অবস্থায় কোর্টে নিয়ে গেছে। ইটটি মারলে পাটকিলটি খেতে হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিহাস বড় নির্মম। আল্লাহর বিচার বড় নির্মম। চোখের সামনে দেখিয়ে দিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষণস্থায়ী। সব সীমা লঙ্ঘন করেছিল শেখ হাসিনা। অহংকার, কী অহংকার। মনে আছে ২০১৪ সালে যখন সমগ্র দেশ চাচ্ছিল নির্বাচন স্থগিত করে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলাপ করে কেয়াটেকার সরকারে অধীনে নির্বাচন হোক। তখন একই অবস্থান ছিল শেখ হাসিনার। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার প্রতিশোধ জিঘাংসা ছিল। আল্লাহর কী হুকুম, সেই তাকেই পালিয়ে যেতে হলো আবার আগের জায়গায়। সেজন্যই বলছি, এখনো সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা করবেন না। কারণ ঝামেলা করে টিকতে পারবেন না। আজও চেষ্টা করেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেবেন। কিন্তু ছাত্ররা তা হতে দেয়নি। কারণ আপনাদের আর দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। অন্তত ৮০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশকে ব্যবহার করে অমানবিক নির্যাতন করেছে। থানায় নিয়ে হাঁটু ও পায়ে গুলি করেছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আড়াই হাজার নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছে। এসব কেউ ভুলে যায়নি। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য গত ১৬ বছর ধরে বিএনপি যে মূল্য দিয়েছে, এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপির মিছিল : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, তাদের অঙ্গ সংগঠন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পৃথকভাবে মিছিল-সমাবেশ-অবস্থান এবং আনন্দ অনুষ্ঠান করেছে। অনুষ্ঠানগুলোতে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা মধ্য জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব হত্যাকান্ডের জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করেন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী- গাজীপুর, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, ভোলা, গাইবান্ধা, নাটোর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ভাঙ্গা (ফরিদপুর), দিনাজপুর, বাগেরহাট, নলিতাবাড়ী (শেরপুর), মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দুমকী (পটুয়াখালী), বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, রাঙামাটি, মেহেরপুর, মাগুরা, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ভালুকা (ময়মনসিংহ), চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, মিছিল-সমাবেশ ছাড়াও পাল্টা অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী নানা স্লোগান দেন।