জাতীয় সংসদে আজ অর্থ বিল পাশ হয়েছে। বাজেটও পাশ হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতাআজ জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রেখেছেন। বাজেট অধিবেশন জাতীয় সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন গুলোর একটি। আর এই সময় জাতীয় সংসদে অনুপস্থিত সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মির্জা আজম। তিনি কেবল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নন, জাতীয় সংসদে অন্যতম প্রবীণ সদস্য হিসেবে পরিচিত।
১৯৯১ সাল থেকে টানা তিনি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসাবে জামালপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গুরুত্বপূর্ণ, অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টেরিয়ান বাজেট অধিবেশনের সময় সংসদে নেই। বরং এই সময় তিনি সপরিবারে ছুটি কাটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা যাচ্ছে।
এবার বাজেট অধিবেশনে শুধু নয়, এর আগে সংসদের প্রথম অধিবেশনেও তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে তিনি সংসদে গিয়েছেন। অধিকাংশ সময় তিনি নিষ্প্রভ। অথচ মির্জা আজমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উত্থান ঘটেছিল সংসদকে ঘিরেই। ১৯৯১ সালে সবচেয়ে তরুণ এই সংসদ সদস্য সংসদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। এই সময় প্রশ্নোত্তরের প্রতিদিনই প্রথম প্রশ্নটি থাকত মির্জা আজমের। তৎকালীন বিএনপি সরকারকে জটিল প্রশ্নে সমালোচনায় বিদ্ধ করে মির্জা আজম আলোচিত হন।
তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে। এই সময় তিনি রাজনৈতিক ভাবেও হয়রানির শিকার হন। একের পর এক তার বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। আদালত থেকে জামিন নিয়ে মির্জা আজম সংসদে তোলপাড় করেছিলেন। তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে তখনই মির্জা আজম সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, আলোচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে মির্জা আজমকে দেখা যাচ্ছে তেজোদ্দীপ্ত। একজন সংগঠন বান্ধব নেতা হিসেবে তিনি ক্রমশ নিজেকে বিকশিত করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মির্জা আজম মন্ত্রী হতে পারেননি। মির্জা আজম মন্ত্রী হননি ২০০৮ সালেও। ২০১৪ সালে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সাতবার এমপি হয়ে মাত্র এক মেয়াদে মন্ত্রিত্ব পাওয়া মির্জা আজম আওয়ামী লীগের সংসদে হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৮ সালে। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার নির্বাচিত হবার পর তিনি কোথাও নেই। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই সম্ভবত মির্জা আজমেরও এক ধরনের হতাশা রয়েছে। এই হতাশা থেকে তিনি ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন কি না- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম চর্চা হচ্ছে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দুই দফায় মন্ত্রিসভায় মির্জা আজমের নামটি সকলের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু মির্জা আজম মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। তিনি হুইপ নন, কোন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানও নন। সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য কোথাও না থাকায় দলের কর্মীরা যেমন অবাক, তেমনই হয়তো হতাশ হয়েছেন মির্জা আজম। এ জন্যই আস্তে আস্তে রাজনীতির অঙ্গনে তার দৃপ্ত পদচারণা ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তিনি রুটিন কাজের মধ্যে নিজেকে সীমিত রেখেছেন। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন গুলোতে তিনি হাজিরা দেন, সংসদেও তার উপস্থিতি আগের তুলনায় কমেছে। আর এবার বাজেট অধিবেশনে তার অনুপস্থিতি থাকা সকলকে বিস্মিত করেছে।
রাজনীতিতে হতাশার কোন জায়গা নাই। একজন রাজনীতিবিদ কিছু পান, কখনও কিছু পান না। প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে কারও রাজনীতি করা উচিত না। মির্জা আজম যেমন এমপি হয়ে কিছু হতে পারেননি, সে রকম ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানের মতো হেভিওয়েট নেতারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। রাজনীতিতে জোয়ার ভাটার পরীক্ষায় উৎত্তীণ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মির্জা আজমের এমন অনুপস্থিতি তার রাজনৈতিক জীবনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। এই বাস্তবতা মির্জা আজম যত দ্রুত অনুভব করবেন, ততই তার জন্য মঙ্গল বলে মনে করছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।