সম্প্রতি দুটি সিনেমা থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে ও অন্যান্য ব্যস্ততা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বুবলী।
ঈদ-পরবর্তী ব্যস্ততা কেমন?
সব মিলিয়ে বেশ ভালোই ঈদ কাটালাম। বরাবরের মতো পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করলাম। ঈদের তিন- চার দিন আগে থেকে মিডিয়া রিলেটেড কাজগুলো শেষ করেছিলাম। আর ঈদ-পরবর্তী ব্যস্ততা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দুটি সিনেমার ডাবিং শুরু করেছি। এছাড়া অন্য একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে হবে শিগগিরই। আপাতত সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছি।
সম্প্রতি দুটি সিনেমা থেকে বাদ পড়েছেন…
দেখুন, এসব নিয়ে কখনো কথা বলতে চাইনি। চাইনি বিষয়টিকে আরও জটিল করতে। কারণ সিনেমা সংশ্লিষ্ট সবাই আমার কাছে সম্মানের এবং পরিচালকরা অভিভাবকের মতো। কিন্তু কিছু মানুষের কর্মকাণ্ডে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ কেউ যখন আমার নাম নিয়ে নেগেটিভ মার্কেটিং করে ভাইরাল হতে চাইবে তখন আমি কথা না বললে দর্শকদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। পরিচালকরা বরাবরই শিল্পী তৈরির কারিগর এবং একটি ভালো সিনেমা তৈরির ক্যাপ্টেন বলেই আমরা সবসময় দেখে এসেছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ভালোভাবে সিনেমা তৈরিতে মনোযোগী না হয়ে গুটিকয় পরিচালক শিল্পীদের নিয়ে ভিত্তিহীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করে ভাইরাল হতে বেশি মনোযোগী। আর যে দুটি সিনেমার কথা বলছেন (বিট্রে ও মায়া-টু) সেই সিনেমাগুলোর একটি থেকে আমি অনেক আগেই নিজে সরে এসেছি। আর অন্য আরেকটি সিনেমা তো আমি সাইনই করিনি, তাহলে বাদ দিল কে?
‘বিট্রে’ সিনেমা নিয়ে এমন কী হলো?
বিট্রে সিনেমার কথা যদি বলি, এ সিনেমার পরিচালক ইকবাল ভাইয়ের আরেকটি সিনেমা ‘রিভেঞ্জ’ এ ঈদে মুক্তি পায়। তিনি সবসময় বিভিন্ন জায়গায় নানান বিষয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করেই যাচ্ছেন, এসবে যে তার সিনেমার ওপর দর্শকদের প্রভাব পড়ছে তিনি সেটা তোয়াক্কা করছেন না। আর রিভেঞ্জ সিনেমাটি আজ থেকে চার বছর আগের শুটিং করা। সেই কাছাকাছি সময়েই বিট্রে নামের সিনেমাটি আমার সাইন করা হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি আজকের মতো ছিল না। সিনেমার পরিচালক যথেষ্ট সম্মান দিয়ে আমাকে ছোট বোন হিসেবে তার সিনেমাগুলোতে চুক্তিবদ্ধ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে দেখলাম ইকবাল ভাই আমাকে নিয়ে বা আমার অন্যান্য মুভি নিয়েও নানান মন্তব্য শুরু করলেন। আর রিভেঞ্জ মুভিতে আমি তো শুধু আমার অংশের শুটিং করেছি, পুরো মুভি কী হচ্ছে, গল্প কোথায় যাচ্ছে, এডিটিং কেমন হচ্ছে, বাকি শিল্পীদের কাজ কেমন হচ্ছে, সম্পূর্ণ মুভিটা কেমন দাঁড়াল এটা তো আমার দায়িত্ব না। এ দায়িত্ব পরিচালকের। কিন্তু তিনি সব দায় তার সিনেমার নায়ক-নায়িকার ওপর দিচ্ছেন। কী হাস্যকর কথা! মনে হয়েছে তার পরবর্তী সিনেমা নিয়েও তিনি হয়তো বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারেন। তাই আমিও মনে করলাম নিজে থেকে সরে আসাই ভালো।
স্ত্রী হিসেবে শাকিবের তুফান সিনেমাকে পরোক্ষ সাপোর্ট করতে রিভেঞ্জের প্রচারণায় যাননি, এমনটা দাবি করেছেন এমডি ইকবাল
দেখুন আমি আমার সিনেমার প্রতি দায়িত্বশীল, সে জন্যই কিন্তু রিভেঞ্জ সিনেমার প্রেস মিট-এ উপস্থিত ছিলাম। সব প্রমোশনাল টিভি প্রোগ্রামে রিভেঞ্জ সিনেমা নিয়ে কথা বলেছি। তাহলে কোথায় প্রচারণায় থাকলাম না। তাহলে এখানে ‘তুফান’ এলো কোত্থেকে। আর আমার পরিবার বলেন, সহশিল্পী বলেন, স্বামী বলেন এবং সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে আমার সন্তানের বাবা বলেন তাকে নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি অসম্মানজনক কোনো মন্তব্য করে আমি অবশ্যই সে ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলব। তাই যেদিন থেকে দেখেছি ইকবাল ভাই শাকিব খানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য শুরু করলেন, তখন থেকেই আমি তাকে এড়িয়ে চলি। এরপর ইকবাল ভাই আমাকে নিয়েও বেফাঁস কথা বলা শুরু করলেন। আর এসব পরিস্থিতির আগেই আমাদের রিভেঞ্জ এবং বিট্রে সিনেমার শুটিংগুলো শুরু হয়েছিল, যার জন্য পেশাগত জায়গা থেকে আমি কাজগুলো শেষ করেছি।
তাহলে জসিম উদ্দিন জাকিরের ‘মায়া-দ্য লাভ ২’
মায়া-টু সিনেমা আমি করছি এটা কোথায় কবে বলেছি? বা কবে মায়া-টু নামে কোনো সিনেমা সাইন করেছি এটা আগে দেখাতে বলেন। যে সিনেমা আমি সাইন করিনি তাহলে বাদ দিল কে? আমি শুধু মায়া নামের একটি সিনেমার পুরো শুটিং শেষ করেছি এবং এখানে আমার অংশের অনেক শুটিং ছিল। কারণ তিনজন হিরো আমার বিপরীতে, তাই শুটিংয়ে পরিশ্রমটাও বেশি হয়েছে। এত কষ্ট করে শুটিং শেষ করার পর মায়া সিনেমা মুক্তির কিছুদিন আগে জানতে পারি সিনেমাটি নাকি অর্ধেক মায়া ওয়ান আর বাকি অর্ধেক মায়া টু হিসেবে মুক্তি দেওয়া হবে। এটা কোনো কথা হতে পারে! আর কোনো সিনেমা পার্ট টু করতে হলে আপনাকে পার্ট ওয়ান সব দর্শকের কাছে পৌঁছাতে হবে, যেন পার্ট টু দর্শক বুঝতে পারে। কিন্তু মায়া পার্ট ওয়ান তো মুক্তির সময় কম হল পেয়েছিল, যেহেতু সে সময় অনেক সিনেমা মুক্তি ছিল।
তাহলে এ সিনেমাটা দর্শক ঠিকভাবে না দেখে কীভাবে কী বুঝবে পার্ট ওয়ান বা পার্ট টু। যখন বিষয়টা জটিল মনে হয়েছে তখন আমি এখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। তাই আমি শুধু মায়া সিনেমা করেছি, মায়া টু নিয়ে জানি না। এ পরিচালকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব বিষয় নিয়ে আমি কখনোই কথা বলিনি। কিন্তু যখন তারা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মিডিয়াকে জানাচ্ছেন, তখন কথা তো আমাকে বলতেই হবে।
ক্যারিয়ারে এটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা…
সত্যি কথা বলতে কি এসব জটিলতা থেকেও অনেক শিখেছি। বলতে পারেন ক্যারিয়ারে এটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা। দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসার জন্যই আজকে আমি বুবলী, তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা অনেক। তাই এখন থেকে আরও বেছে বেছে কাজ করব। প্রয়োজনে বছরে ২/৩টা সিনেমা করব, যেটা ভালো গল্পের এবং ভালো নির্মাণের হবে। তা না হলে করব না।
ওটিটি নিয়ে কী ভাবনা…
দেখুন, ‘টান’ এবং ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ করার পর বেশ ভালো রেসপন্স পেয়েছিলাম ওটিটিতে। আমি নিজেও অবাক হয়েছি ওটিটি নিয়ে এত পজিটিভ আমাদের দেশের দর্শক। এখন ওটিটি নিয়ে অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব পাচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে এ গল্পগুলো যদি বড় পর্দায় দেখানো যেত তাহলে বেশ ভালো হতো। কারণ আমি বড় পর্দাকেই বেশি প্রাধান্য দিই। যদিও অনেকেই ওটিটির জন্য প্রস্তাব দিচ্ছেন, আপাতত ওটিটি নিয়ে ভাবছি না। ভবিষ্যতে দেখা যাবে।