আলোচিত অভিনেত্রী পরীমণির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে চাকরি হারাতে চলেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিল। অভিনেত্রী পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন ও স্ত্রীর অবর্তমানে রাজারবাগে নিজ বাসায় অভিনেত্রীকে নিয়ে গিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। সেই তদন্তের প্রেক্ষিতে চাকরি হারাতে বসেছেন এডিসি গোলাম সাকলায়েন।
এদিকে, এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই সাকলায়েনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সামনে আনলেন মডেল, অভিনেত্রী ও আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল। পরীমণি ইস্যুতে সাকলায়েনের চাকরি যাওয়া নিয়ে যখন চারদিকে শোরগোল তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় পিয়া লিখলেন, ‘এই সেই ব্যক্তি (গোলাম সাকলায়েন), যিনি আব্বার এফআর টাওয়ার মামলায় ডিবি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রায় ৬-৭ দিন আব্বাকে দেখতে আমি ও আম্মা প্রতিদিনই ডিবি অফিসে যেতাম।’
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ঘটনার আদ্যোপান্তও তুলে ধরে সাকলায়েনের বিরুদ্ধে পিয়া আরও লিখেছেন, ‘এই সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতারণামূলক এবং জোরপূর্বকভাবে সিআরপিসির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি নিতে আব্বার সম্মতি নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি সম্মতি না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম আব্বাকে। কেননা, এ ঘটনায় মোটেও জড়িত ছিলেন না তিনি। কিন্তু আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার আগেই তিনি আব্বার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আদালতে পরদিন জমা দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় আমার ওপরও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং আব্বাকে বলেন- আমি যাতে চুপ থাকি। তার জানা ছিল না যে চুপ থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করিনি আমি।’
আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল বলেন, ‘তিনি (গোলাম সাকলায়েন) যেদিন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের জন্য জমির মালিক হিসেবে আব্বাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তখন আব্বা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আব্বার বয়স তখন ৭৭ বছরের বেশি।’
ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পিয়া বলেন, ‘আমার আব্বা নির্দোষ থাকার পরও গোলাম সাকলায়েন আমাদের যে পরিমাণ হয়রানি করেছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ পর্যন্ত তো আব্বা এই ঝামেলাটা নিয়ে মারাই গেলেন। তার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি কিছু না করেই মাঝখান থেকে জমির মালিক হওয়ায় শেষ বয়সে তাকে হাত কড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এ ঘটনায় নাম আসা অন্যান্যদের মধ্যে কম প্রভাবশালী হওয়ায়, তখন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল। তখন সাকলায়েনের মতো লোকের কাছে এমন হয়রানি আমরা মানতে পারিনি। সেই ক্ষোভ থেকেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সাকলায়েন এখন হয়তো অবাক হবেন যে, এ ঘটনায় কতটা ক্ষোভ ছিল আমাদের। তিনি এখন নিজে বিপদে পড়েছেন, এখন বুঝবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এই ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৭৫ জন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী বনানী থানা-পুলিশ। এই মামলার অন্যতম আসামি এস এম এইচ আই ফারুক। তিনি ছিলেন পিয়া জান্নাতুলের শ্বশুর।