যুক্তরাজ্যের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৫ জন বাংলাদেশি প্রার্থীর মধ্যে আটজন লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ থেকে নির্বাচন করছেন দুজন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি থেকে একজন, লিবডেম থেকে একজন। এ ছাড়া আটজন স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। বাকি পাঁচজন নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন, রিফর্ম ইউকে, গ্রিন পার্টি থেকে।
ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচন আগামী ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশটিতে ৬৫০ আসনের জন্য নির্বাচনে অবতীর্ণ হবেন ৪৩৭৯ জন প্রার্থী। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন নির্বাচনি দৌড়ে। মুসলিম ও বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অন্তত শতাধিক প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২৫ জন বাংলাদেশি প্রার্থী বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করছেন।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে সংখ্যালঘু জাতিগত পটভূমি থেকে বর্তমানে ৬৫ জন সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এশিয়ান বংশোদ্ভূত। প্রথম বাংলাদেশি এমপি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইতিহাস সৃষ্টি করেন রুশনারা আলী। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ড. রূপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আপসানা বেগম ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৫ জন বাংলাদেশি প্রার্থীর মধ্যে আটজন লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ থেকে নির্বাচন করছেন দুজন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি থেকে একজন, লিবডেম থেকে একজন। এ ছাড়া আটজন স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। বাকি পাঁচজন নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন, রিফর্ম ইউকে, গ্রিন পার্টি থেকে।
লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো), টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট), আপসানা বেগম (পপলার ও লাইমহাউস), ড. রূপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন), নুরুল হক আলী (গর্ডন এবং বুকান), রুমি চৌধুরী (উইথাম), রুফিয়া আশরাফ দক্ষিণ নর্থহ্যাম্পটনশায়ার) ও নাজমুল হোসাইন (ব্রিগ এবং ইমিংহাম)।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আতিক রহমান (টটেনহ্যাম), সৈয়দ শামীম আহসান (ইলফোর্ড দক্ষিণ), (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নাজ আনিস-মিয়াহ (ডানফার্মলাইন এবং ডলার)। লিবড্যাম থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রাবিনা খান (বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি), তিনি রুশনারা আলীকে বেশ চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন। একই আসন থেকে গাজা ইস্যুকে সামনে নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন আজমল মাসরুর (বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি), ব্যারিস্টার শাম উদ্দিন (বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি) ও মো. সুমন আহমেদ (বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি )। পপলার লাইম হাউসে বর্তমান লেবার এমপি আপসানা বেগমকে স্বতন্ত্র হিসেবে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তার সাবেক স্বামী এহতাশামুল হক। বর্তমান লেবার লিডার, সব জরিপে যিনি ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেই স্যার কিয়ার স্টারমারকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ওয়াইস ইসলাম (হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাস)। এখানে গাজা ইস্যু নিয়ে কথা বলে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন ওয়াইস ইসলাম।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত বো-স্ট্রাটফোর্ড আসনে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও হালিমা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই দুই ব্রিটিশ বাংলাদেশি গাজা ইস্যু এবং হালিমা লেবার পার্টির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ইলফোর্ড সাউথ থেকে গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দ সিদ্দিকী। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নূর জাহান বেগম। একই আসনে জর্জ গ্যালওয়ের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন গোলাম টিপু। একই পার্টি থেকে হ্যাকনি সাউথ শোরডিচে মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেডফোর্ডে নির্বাচন করছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। এর আগে তিনি লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করেছিলেন ২০১৫ সালের নির্বাচনে। হঠাৎ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে চরম রক্ষণশীল দল রিফর্ম ইউকে থেকে ইলফোর্ড সাউথ থেকে প্রার্থী হয়েছেন রাজ ফরহাদ।
বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন মূলত গাজা ইস্যুকে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে সমালোচনা করে। এতে বেশ চাপে আছেন চারবারের নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে পার্লামেন্টে ভোটদান থেকে বিরত থাকায় তার এলাকার ভোটাররা বেশ নাখোশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পেইনে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। এদিকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন আপসানা বেগম, রুপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক। বিভিন্ন জরিপ বলছে, আগের চার ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপির পাশাপাশি নতুন আরও অন্তত দুই থেকে তিনজন বাংলাদেশির এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর পেছনে সারা দেশে এই মুহূর্তে লেবারের জোয়ার বড় ভূমিকা রেখেছে। তাই লেবার থেকে নতুন দুই হতে তিনজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে এবং রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক পাস করলে উভয়েই মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।