ভোটের মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত মিত্র ছিল ১৪-দলীয় জোট ও মহাজোট। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটে এই জোটের নেতাদের ওপর ভর করে চলত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওয়ান ম্যান আর্মি হিসেবে পরিচিত এই নেতারাও চলে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও জাতীয় পার্টি-জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুদের এখন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে দেখা যায় কারও কারও নম্বর বন্ধ, আবার রিং হলেও তাতে সাড়া দেননি কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে যদি জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ১৪-দলের এসব নেতারা স্বীকৃতি না দিতেন তাহলে আজ দেশের এ পরিণতি হতো না। আওয়ামী লীগকেও এত করুণ পরিণতি ভোগ করতে হতো না।
অভিযোগ অনুযায়ী, তেমন কোনো জনসমর্থন না থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ১৪-দলীয় জোটে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। প্রতিদান হিসেবে ২০১২-২০১৯ সাল পর্যন্ত পেয়েছেন তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। ইনুর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ আছে। তার সময়েই বন্ধ করা হয় দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা। একই অবস্থা নামসর্বস¦ দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের। বামপন্থি লোকজনের ওপর ভর করে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালের মহাজোট সরকার পঠনের পর পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
১৪-দলের আরেক সমালোচিত নেতা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। তরিকত ফেডারেশনের এই নেতা আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে মামলা করে দেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৯ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকে এই নেতা বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই এখন কারফিউ তোলা যাবে না। জামায়াত-শিবির ও বিএনপি এখনো ঘরে ফেরেনি। কারফিউ তোলা হলেও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখন মাঠ থেকে তোলা যাবে না। আর ১৫ দিন বা কমপক্ষে এক মাস রাখতে হবে মাঠে।’
জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সবগুলোতেই জামানত হারানো এই দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া। ২৯ জুলাই গণভবনের সভা শেষে এই দিলীপ বড়ুয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জাতিকে বর্তমান ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।